OrdinaryITPostAd

মৌমাছি পালনের ব্যবস্থাপনা ও মৌঋতুতে পরিচর্যা

প্রিয় পাঠক,মৌমাছি পালন প্রাণী বিজ্ঞানের একটি ফলিত শাখা।মৌমাছিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করার নামই কৃত্রিম মৌমাছি চাষ বলে। তাই প্রকৃতি থেকে কিছু পোষ মানা মৌমাছি নিয়ে এসে এ পদ্ধতিতে চাষ করে দুই দিকে লাভবান হওয়া যায়।


শ্রমিক মৌমাছি বিক্রি করা ওব্যবসায়িক ভাবে প্রচুর মধু চাষ করে দেশে ,দেশের বাইরের মধুর চাহিদা পূরণ কার সম্ভব। তাই সঠিক মৌমাছি পালনের ব্যবস্থা ওপরিচর্যা না থাকলে বিভিন্ন কারনে মৌমাছি উড়ে চলে যেতে পারে।

ভূমিকা

মৌমাছিকে সবচেয়ে পরিশ্রমী প্রাণী বলা হয়। মৌমাছিরা ফুল থেকে যেমন মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা করে নিজেদের ও মানুষের মধুর চাহিদা পূরণ করে । তেমনি মানুষ যদি মৌমাছির মত পরিশ্রমী হয় তাহলে নিজে ও পরিবারে মৌলিক চাহিদার কোন অভাব হবে না।এ ছোট সোনালী রঙের সাদা ডোরাকাটা প্রাণীগুলো সাধারণত গাছের গর্তে ,গাছের ডালে, বাড়ির আনাচে কানাচে হালকা আলোর জায়গা,চাক তৈরী করে থাকে।মৌমাছিদের এরূপ বাসস্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয় কাঠের বাক্স। কাঠের বাক্সে মৌমাছি পালনই আধুনিক ব্যবস্থা।

মৌমাছির প্রজাতি
১. পাহাড়ী মৌমাছিঃ আকারে সবচেয়ে বড়। বড় বড় গাছের ডালে পাহাড়ের গাঁয়ে এরা চাক বাঁধে।চাক প্রতি মধু উৎপাদন প্রতিবারে প্রায় ১০ কেজি । এরা পৌষ মানে না তাই এধরনের মৌমাছি চাষ করা যায় না।
২.ভারতীয় মৌমাছিঃ এরা আকারে মাঝারি ধরনের হয়। অন্ধকার আড়ালকরা স্থান,গাছের ফোকর, দেয়ালের ফাটল ,আলমারি ,ইটের স্তূপ ইত্যাদি স্থানে এরা চাক বাঁধে। চাক প্রতি মধু উৎপাদন প্রতিবারে গড়ে৪ কেজি এরা শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় এই মৌমাছি দিয়ে চাষ করা যায়।

৩.ক্ষুধে মৌমাছিঃ এরা আকারে সবচেয়ে ছোট। এরা ঝোপ জাতীয় ডালে পাতায় শুকনো কাঠে চাক বাঁধে। চাকের আকার খুব ছোট হওয়ায়প্রতিবারে মধু উৎপাদন প্রায় ২০০ গ্রাম হয়ে থাকে।এরা শান্ত প্রকৃতির হলেও এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না।

মৌমাছির চাক

মৌমাছিরা মোম দিয়ে চাক তৈরী করে। চাক গুলো ছোট ছোট খোপ বিশিষ্ট ছয়টি দেওয়াল থাকে।তবে শিশুও নারী মৌমাছিদের চাক গুলো বেশ বড়ও লম্বাটে। এদের মধু জমানো চাক গুলো উপর দিকে থাকে। শিশুরা চাকের নিচের দিকে কিনারায় রানী মৌমাছির দিকে থাকে। ডিম পাড়ার সময় রানী মৌমাছি খোপের মাপ দেখে নিদিষ্ট পরিমান ডিম পাড়ে।ডিম পাড়ার তিন দিন পর শিশু মৌমাছি শ্রককীট থেকে বেরিয়ে আসে।শ্রমিক মৌমাছিরা এদের কে তিন দিন ধরে পরাগরেনুর সাথে রাজসুধা খেতে দেয়। রাজসুধা হচ্ছে শ্রমিক মৌমাছির এক প্রকার লালাগ্রন্থি। ৮ থেকে ৯ দিন পর শ্রমিক মৌমাছিরা েসবকিটের মুখ মোম দিয়ে বন্ধ করে দেয়। পুরুষ মৌমাছিরা এ বন্ধ খোপের ভেতর শুককীর বা পুত্রলিতে পরিণত হয়। বন্ধ থাকা কালীন সময়ে রানরে ক্ষেত্রে ৭দিন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ১২দিন পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর মুককীট বা পর্ল মৌমাছিতে পরিণত হয়ে খোপের মুখ ফেটে অজস্র মৌমাছি বাইরে বেরিয়ে আসে।

মৌমাছি পালন ব্যবস্থাপনা

মৌমাছি পালনের বাক্স

 বাংলাদেশে সাধারনত ভারতীয় মৌমাছি দিয়ে মধু চাষ করা হয়।এসব মৌমাছি পালনের জন্য কাঠের তৈরী বাক্স ব্যবহার করা হয়।এগুলো সাধারনত ২৮.৬ সে.মি*২৭.৭ মসমি* ১৭.৪সে.মি মাপ বিশিষ্ট হয়। এর নিচের দিক খোলা একটি পাটাতনের উপর বসানো থাকে।বাক্সের উপরদিকটা ঢাকনা থাকে নিচের দিকটা সমান্তরাল কাঠের ফ্রেম থাকে। এফেম গুলো একটি প্রকোষ্ট উপর আর একটি প্রকোষ্ট সাজানো থাকে মৌমাছিরা এ সব প্রকোষ্ট ভেতর চাক বাঁধে। যেসব স্থানে ফুল সহায়ক গাছ গাছালি,গ্যাসও ধোয়া মুক্ত,উচু,ছায়াযুক্ত,শুকনো জায়গায় এসব মৌমাছির বাক্স গুলো বসানো উচিত।

মৌমাছি সংগ্রহ ও কৃত্রিম খাবারঃপ্রাকৃতিক ভাবে যেখানে ভারতীয় মৌমাছিদের চাক থেকে মৌমাছি সংগ্রহ অথবা প্রতিষ্ঠিত মৌচাষীর কাছ থেকে ক্রয় করে মৌচাষ শুরু করা যেতে পারে।কিনে আনার পর মৌমাছিকে বাক্সবন্দি করে তিন চার দিন কৃত্রিম খাবার যেমন ঘন চিনির সরবত বা সিরাপ দেওয়ার প্রয়োজন হয়।কয়েকদিন পর বাইরে ছেড়ে দিলে নিজের খাবার নিজেরােই সংগ্রহ করে থাকে। কখনো কখেনো প্রাকৃতিক পরিবেশের খাবারের ঘাটতি হলে কৃত্রিম খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

মৌমাছিদের উপযোগী গাছপালা

 সারা বছর মিষ্টিরসও পরাগরেণু সমৃদ্ধ ফুল প্রাপ্তি যাতে নিশ্চিত হয় সেসব গাছপালার প্রয়োজন। সেজন্য বাক্স রাখার আশপাশের ৩/৪ কিলোমিটার জায়গায় যেসব গাছ থাকা উচিত সেগুলো হল আম ,জাম, লিচু,পেয়ারা, ডালিম, বেল, কমলালেবু,ছোলা, শিমুল, কাজুবাদাম,বাদাম, সরিষা ইত্যদিগাছ। তবে লিচু ও সরিষা ফুলের মধু বেশ জনপ্রিয়।

মৌমাছির ঝাঁক বাঁধা

সাধারনত বসন্ত ওগ্রীষ্ম কালে মৌমাছিদের ঝাঁক বাঁধতে দেখা যায়। মৌচাষের সংখ্যা বেড়ে গেলে খাদ্যের অভাব হলে মৌমাছিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায়। তবে ভাবী রানী মৌমাছি যেসব খোপেনতুন চাক করতে দেখা যায় সেসব ফ্রেমে কিছু মৌমাছি স্থানন্তর করে নতুন চাক তৈরী করতে দিতে হবে।
মৌকালিন পরিচর্যাঃবংশবৃদ্ধির সময় মৌমাছি যখন প্রচুর ডিম পাড়ে তখন মৌবাক্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
 প্রকৃতিতে যখন প্রচুর ফুলের সমারোহ দেখা যায় মৌমাছিরাপ্রচুর পরিমানে পরাগরেনু থেকে ফলের মধু সংগ্রহ করে থাকে বংশবৃদ্ধি কালে বাচ্চ ঘরে নতুন ফ্রেম দিয়ে পুরানো রানী মৌমাছিকে সরিয়ে নতুন রানী মৌমাছিকে সংযোজন করতে হবে। বংশবৃদ্ধির শেষ দিকে মৌমাছিরা ঝাঁকবেঁধে যাতে কোথাও উড়ে যেতে না পারে সেজন্যনবনির্মিত পুরুষও রানী মৌমাছির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাদের একাধিক বাক্সে ভাগ করে দেয়া উচিত। মৌমাছিদের বংশবৃদ্ধিকালে মাঝে মাজে কলোনী পরিক্ষা করে তাদের অন্যান্য সমস্যা গুলোর প্রতি দৃষ্টিদেয়া উচিত।

খাদ্য সঞ্চয় কালে পরিচর্যা

 প্রকৃতিতে যখন প্রচুর ফুল পাওয়া যায় তখন ফুলের রস দিয়ে মৌমাছিরা মধুতৈরী করে রাখার স্থান কালে নতুন মৌবাক্স বেশি করে দিতে হবে । চাকের শতকরা ৭টি কুটুরি যখন মধুতে ভরে যায় তখন সেই চাক থেকে মধু নিস্কাশন করে নিতে হবে। প্রযোজন বোধে কিছু মৌচাক সরিয়ে নিয়ে অন্য স্থানে নিয়ে বিশেষ করে ঐ এলাকা থেকে মৌমাছিরা আওে বেশি মধু সঞ্চয় করতে পারে। শীতের প্রচন্ড প্রকোপে মৌমাছিরা যেন কষ্ট না পায় এজন্য শীতের রাতে মৌবাক্সগুলো চট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

খাদ্য সঞ্চয় কালে পরিচর্যা

 যে সময় প্রকৃতিতে খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য ফুল কম থাকে তখন মৌমাছিরা খাদ্য সংকটে পড়লে তারা ঝাঁক বেঁধে উড়ে যেতে পারে ।যাতে উড়ে না যেতে পারে সেজন্য কৃত্রিম খাবার যেমন চিনির ঘন শরবত ,সিরাপ তৈরী করে বাক্সের ভেতর দিয়ে দিতে হবে। সিরাপ রাতে একটি নিদিষ্ট সময়ে সন্ধ্যার সময় দেওয়া উচিত। রাতে যাতে এখাবারের জন্য মৌমাছিরা মারামারি না করতে পারে সেজন্য বাক্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করে আলাদা আলাদা বাক্সে খঅবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

 ঝড় বৃস্টির সময় ক্ষতির সম্ভবনা থাকলেমৌবাক্সটি বাতাসের বিপরীত মূখী শুষ্ক নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে ।বাক্সটি সব সময় ছায়া যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। কাদ্য সঙঙ্কট কালে কলোনী যাতে দুর্বল হয়ে পড়রে চারটি মৌবাক্স কমিয়ে কম সংখ্যক চাকে মৌমাছি একত্রে করে দেয়া উচিত। খাদ্য সংঙ্কট কালে বেশী রোগ জীবানু বৃদ্ধি পায় সেজন্য ঐ সময় কলোনীর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মন্তব্য

খাঁটি মধু কে বা না চায় । তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনায়ন কেটে বাড়িঘর তৈরী করার জন্য প্রকৃতি থেকে যে মেওমাছির মধু পাওয়া যেত সেসব আর পাওয়া যায় না । কিন্তু মধু মানুষের শরীরের জন্য খুবই একটি গুরুত্ব পূর্ন উপাদান।তাই বর্তমানে এ বাড়তি মধুর চাহিদা পূরনের জন্য কৃত্রিম মৌমাছি পালনের ব্যবস্থা করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪